[ MARZUK RUSSELL]
মারজুক রাসেলের সেরা কবিতা কালেকশন
মারজুক রাসেল এর জন্ম ১৯৭৩ সালের ১৫ আগস্ট, গোপালগঞ্জে। তিনি একজন কবি, গীতিকার, মডেল এবং অভিনেতা। তার কর্মজীবনের শুরু কবিতা ও গানের গীত রচনার মধ্য দিয়ে। তিনি টেলিভিশন নাটকের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, টেলিভিশনে তার অভিনীত প্রথম কাজ ছিল মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী পরিচালিত আয়না মহল। এছাড়াও তিনি অসংখ্য টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে ব্যাচেলর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়ের সূচনা করেন এবং প্রশংসা পান। মারজুক একাধিক সঙ্গীত ভিডিওতে কাজ করেছেন,যেমন ঘুড়ি তুমি কার আকাশে উড়ো (২০১২), স্মৃতি কথা (২০১৭) ইত্যাদি।
মারজুক রাসেলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শান্টিং ছাড়া সংযোগ নিষিদ্ধ’ প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে এবং তার পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ, ‘চাঁদের বুড়ির বয়স যখন ষোলো’; ‘বাঈজি বাড়ি রোড’; ‘ছোট্ট কোথায় টেনিস বল’ ধারাবাহিক ভাবে ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। এবং তিনি ২০২০ সালে ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর’ নামে একটি নির্বাচিত কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।
মাফলারমর্ম
দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরির-
দেহ গিয়েছিলো পাশ্ববর্তী অধ্যায়ের পর-
পৃষ্ঠাসংখ্যা লিখে রাখো চৌষট্টি প্রহারে-
তারপর শব তার আবর্জিত-
তুমি বলো পরকালে প্রফুল্লের মিষ্টান্নভান্ডার!
দেহ গিয়েছিলো পাশ্ববর্তী অধ্যায়ের পর-
পৃষ্ঠাসংখ্যা লিখে রাখো চৌষট্টি প্রহারে-
তারপর শব তার আবর্জিত-
তুমি বলো পরকালে প্রফুল্লের মিষ্টান্নভান্ডার!
স্বপ্ন
দরোজা তাকিয়ে থাকে ঘড়িটির দিকে-
এমন তাকায় সে আমাদের শিখে।
প্রেম
আলোতে তাকাও।
— অন্ধকার।
আঁধারে তাকাও।
— অন্ধকার।
বিরহ
মহল্লার সেলুন আর কতদিন বন্ধ থাকবে?
বিবাহ
দুর্গা তোমার একটি হাতে,
আসব আমি অনেক রাতে।
মৃত্যু
প্রচলিত সাবানের একাধিক ব্যবহার শেষ হলে বাঁচি।
ছায়াডাকা, পাখিঢাকা
কাঁচাপাকা ঢিল গাছে ঝুলে থাকে। দেখা যায়।
কিয়দংশ পাতার আড়ালে— সে-গুলোও কাঁচাপাকা?
— সন্দেহ জঙ্গল খুলে আশেপাশে থাকে —
পাতাকে আড়াল করে, আড়ালকে পাতায় বসিয়ে রেখে
অপেক্ষা করার কথা অনুরোধে বলে
আমরা বড়ুই ছুঁড়ি গাছে—
এসব বড়ুই যেসব অঞ্চলে হয়
সে-অঞ্চল ছায়াডাকা পাখিঢাকা অভিধায় খ্যাত।
ননঅ্যাকাডেমিক
আমার গ্রাম।
শারলেভিল থেকে প্যারিসে, কলকাতায়, ঢাকায় –
লিখতে লিখতে আসি
কাটতে-কাটতে যাই –
লেখা-কাটার মাঝখানে জ্ঞান গুঁজা দিয়া
কবিতা লেখাতে চাও,
লিঙ্গ সামনেই যাবে-আসবে- তীরনির্দেশ করো;
আমরা সামনের পিছনগমন করি-
আদব শেখাতে আসো- বেয়াদবি শিখাইতে যাই না-
‘কিরে র্যাঁবো, তাই না?’
পানি-সংকট
তোমাকে ডান-বাম কাঁধের;
পিঠের-বুকের-কোমরের উপরে;
মাথায় ঢাললাম; গোসল হয়ে গেলে-
পুরুষমানুষের প্রধানত দুইটা মাথা থাকে;
দুইটা দুই রকম, দুইটাই দুই গরম;
একটা ব্যস্ত বেশি, আরেকটা কম;
একটা ক্রিয়েটিভ অন্যটা অ্যাকক্টিভ।
চিতাইপিঠা
উপুড় কইরাও খাইয়া দেখছি- যায়-
খাড়া কইরা তো যায়ই,
মাথার দিকে দিয়া শুরু করতে হয়।
শোয়াইয়া খাইতে দিক লাগে না- বিদিক লাগে;
খাইয়া সাইরা গরম হইতে শীতে বাইরাইবার রাস্তা দেখা যায়।
মারজুক শা’র মাজার
দম।
দমে মুক্তি, দমে পুণ্য
‘শূন্য আকাশ আকাশ শূন্য…’
জিকির বাড়বে আকাশ আকাশ,
তাহলেই সবুজসুমতি মৃতপ্রায় ঘাস।
দানবাক্স অক্সিজেন, প্রেম ছাড়া কিছুই গ্রহণ করে না।
হে-এএএই, অন্ধকারে কে যাচ্ছ? দাঁড়াও;
মারজুক শা’র মাজার সামনে-
‘শূন্য আকাশ আকাশ শূন্য…’ জিকিরটা বাড়াও।
পাবলিক উওম্যান
দড়ি পাকানোর আগের অবস্থা ধৈর্যে ধরে
ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঈ-প্রত্যয় যোগে রমণী হয়েছে
তারপর ফেটে গেছে ইশকুলে, অফিসপাড়ায়,
আবাসিক হোটেলের সিঁড়ি বেয়ে চাঁদে…..
প্যারাডাইম শিফট
ভাত খাওয়ার জন্যই আগুন, কাগজ, ব্লেড খাওয়ার খেলা।
'ভাত, চলো ছোবল খাই,
পেটের নগদ নীল নামাই।'
'ওই নীল সিঁড়ি দিয়া নামবে না,
ওই নীল লিফট ছাড়া নামবে না!'
'তাইলে চলো আমরাই লাফ দিয়া নামি...'
ধপাস!
বিডি কলোনি
আমাদের সূর্য সন্ধ্যায় ওঠে―
নকলের নকলরে নকল কইরা
পরীক্ষা দেয়, টাইনাটুইনা পাস করে,
অকর্মা থাকে, পিরিত ধরাইতে গিয়া ছ্যাঁক খায়,
নেশাপানি করে, চাকরি হাতায়―ধরে, বিয়া করে,
বাচ্চা বানায়, গুল লয়, চিল্লা দেয়...ডুইবা যায়।
বালিশ নিক্ষেপ
তোমার মাইয়া তোমার কাছ থিকা আমার চোখ কাইড়া নিয়া
যারে যারে দেখাইতেছে,
তারে তারে আমি প্রথমে ছবিতে,
পরে ফিল্মে, পরে বাস্তবে দেখছিলাম, ওর বয়সেই।...
ওর কাছ থিকা কেউ কাইড়া নেওয়ার আগে ফেরত দিয়া যাইতে কইও―
আমি বেশি দিন অন্ধ থাকতে পারি না।
তুমি যার কাছ থিকা কাইড়া নিছিলা
সে আরেকজনের কাছ থিকা কাইড়া আনছিল;
সে যার কাছ থিকা কাইড়া নিছিল, তারে আমি সাইধা দিছিলাম।
বাংলা চতুষ্পদী
চেয়ার কোনো দিনও বসতে পারে না―
এইটা প্রথম জেনে থাকবে ঘোড়া!
টকবক টকবক টকবক টকবক...হ্রেষা―
ঘাসের সাথে হালাল মেলামেশা;
মেলামেশায় জন্ম পায় ফড়িং―
'ফড়িং কখনোই অ্যাকসিডেন্ট করে না'―উড়োজাহাজও মানে।
বাতাস ছাড়া লাটাইও উড়তে শেখায় না।
ওয়েটিং প্লেস
পাখা পেয়ে গেলে চুমু উড়ে যায় ডান হাত থেকে
সকালের সাড়ে দশটায়, ক্লিনশেভে, চা-দোকান, নীলক্ষেত, কার্ডফোন,
রোদ, বৃহস্পতি, সিগারেটে....শরীরভ্রমণ পরবর্তী ঘামে----
উল্লিখিত ওড়াউড়ি সড়কের পরপারে রিকশায় এসে নামে।
কাজি অফিস
লং-ড্রাইভ। চাঁদে আর যাচ্ছি না কখনো।
জ্যোৎস্না পড়ছে গায়ে, গড়াতে শেখার পর
লক্ষ্য ঠিক রেখে পায়ে,
জুতোর ওপর, ঘাসে ; অতিরিক্ততার পাশে।
ওসবের পিছু পিছু প্রেমও পড়ার চেষ্টা করছে
ছড়াতে পারার ক্ষমতা পেলেই পড়ে যাবে--
'অনেক উপরে, আকাশেই প্রেম থাকে'--- একজন আরেকজনকে,
আরেকজন একজনকে, বোঝাতে বাধ্য করার বিরতিতে,
দুটিজন একসংগে ; আলোতে, ছায়াতে, অন্ধকারে ; হেঁটে, বসে,
দাঁড়িয়ে ; শুয়েও ভাবে---
'বাজ পড়ে কোন প্রয়োজনে?'
দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর
চিহ্ন রাখে খোঁজ আয়ু কতদূর গেলে অপরাধ গড়পড়তার,
নিয়মিত শেভ—পবিত্র সেলুন,
থলেভর্তি বাজারের পুঁইশাক উঁকি দ্যায়—‘ভালো আছি,
কাঁটা দিত বুড়ি—ঝাঁট দ্যায় পথ,
এতদিনে সেই প্রান্তবর্তী পথিক পেয়েছি।’
ভ্যালেনটাইনস্ ট্যুর
এই নিয়ে অনেক পুকুরে বঁড়শি পেয়েছি– যার বয়স পঁচিশ–
ওই টোপ অনেকেই গেলে ভেবে নদীতেও রোজ গেছি–
(চতুর ইলিশ বেশি মেয়েলি–ধারায়)
বঁড়শিতে হবে না বুঝেছি– তাই এই দীর্ঘ জাল, দীর্ঘকাল বোনা।
শান্টিং ছাড়া সংযোগ নিষিদ্ধ
হাতকে তালাক। যেখানে বিদ্যুৎ গেলে যাই
বৃষ্টি এলে ঠিক তার কাছাকাছি—
তারপর যদি বন্ধু কাঁচাতে লবণ ওরা,
সংসারেও দামি সব ধনবাদী সাপ—
বিক্রি, চলো সাঁকোর ওপারে বিক্রিহীনতার হাটে।
ফল—
যার কিছু ঝুঁকে-পড়া গাছ বেঁচে থাকে,
ছেলেটি ছায়ায় বসে ছেঁড়া-পাতা আঁকে।
লাভটুগেদার
ঝিনুক নেব না বলিনি, শামুকও নেব;
বিনিময়ে শামুক-ঝিনুক এলোমেলো
করার সাড়ে ছ’ইঞ্চি এই ছুরিটা ধারালো,
তোমাকে দেব।
যত্ন আমিই নেব- যত্ন যোগ, কামসূত্র ও বিজ্ঞানসম্মত-
তুমি শুধু মাঝেমধ্যে, সহ্যে কুলোলে প্রতিদিন
ওকে ব্যবহার করে চকচকে রাখতে সাহায্য করবে-
পুংঃ ওয়াদা?
স্ত্রীঃ ওয়াদা।
প্রেমিকবৈশিষ্ট্য
কুয়াশার ফুল থেকে তুলে নেব নীল প্রত্যাখ্যান-
পরাণ গায়েন ডাকবে আবার
‘অচিন পাখির গান শুনে যান’-
নদীয়ার জলে স্নান উৎসর্গের আগে রোপণপূর্বক বীজ
নেচে যাব সুলতানের চাষির হাতে মাছিমদিয়ায়,
আর ডেকে যাব-
‘ডাঙর ঢেমনি এইখানে আয়
তর্জনীতে কাদা মেখে তোর কপালে পরিয়ে দিই
বিঘা বিঘা সুন্দরের টিপ।’
মালের আড়ৎ
হালখাতা লাল মলাটের হয় কেন?
এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে-খুঁজতে প্রতিটি বছর আসে;
মৃত্যুও আসবে শুভসূচনায়।
বৈশাখশুরুতে মিষ্টিমুখ করে ও করায় আড়তদাররা-
মৃত্যুতেও মিষ্টিমুখ করে ও করায় জীবিতরা-
-নতুন হিসেব শুরু হয় আড়তে আড়তে-
শোনা যায়, বই পড়ে জানা যায়,
নতুন হিসেব শুরু হয় ওপারেও-
ওপারে ভালো-মন্দদের খেলাখেলির পাশাপাশি মাঠ,
মাঝখানে বিশাল দেয়াল,
স্বপ্নে-দেখা-দেয়ালের উপর শূন্য আসনে বসে আছেন
শূন্য, মহাখালি-
মচকানো স্বপ্নে বোঝা গেল না
কাদের খেলার প্রশংসায় তিনি দিচ্ছেন হাততালি।
নৌকা, মদ
ভেসে যাব, ডুবে–
পশ্চিমে না, পুবে!
‘নৌকা যাকে ভালোবাসে তাকেই করে বিয়ে’–
এই গল্প উড়ে বেড়ায় মাথার উপর দিয়ে!
ধরতে গেলেই গল্পগুলো মেঘ হয়ে যায় দূরে,
রাতে ছিলাম নদীপথে , ভোরবেলা পুকুরে।
লেডি’স-ফিঙ্গার
আঙ্গুলের নোখ যেভাবে কাটলে সুবিধায় পড়ো,
বিষয় আমাকে বেশি-বেশি ওই দায়িত্ব দিয়েছে।
ওয়েটিং প্লেস
পাখা পেয়ে গেলে চুমু উড়ে যায় ডান হাত থেকে
সকালের সাড়ে দশটায়, ক্লিনশেভে, চা-দোকান, নীলক্ষেত, কার্ডফোন,
রোদ, বৃহস্পতি, সিগারেটে….শরীরভ্রমণ পরবর্তী ঘামে—-
উল্লিখিত ওড়াউড়ি সড়কের পরপারে রিকশায় এসে নামে।
কয়েকটি খণ্ডচিত্র
১.
আকাশ,
তোমার সবাইকে নিয়ে
নিচে নেমে এসো,
জমিন আমাদের সবাইকে নিয়ে
তোমাদের বর্তমানে বেড়াতে যেতে চায়।
২.
ছাতা, রেইনকোট
রিকশার হুড, গামবুট;
ছাউনি-
নিজেদের শুকনো রাখতে তৈরি করেছে মানুষ
কার দায়িত্বে কে যে!
একদিন-না-একদিন সবাই বৃষ্টিতে ভেজে।
৩.
স্বপ্নের সাম্প্রতিক বরাদ্দ কোটা
কিশোরী তোমার
আষাঢ় ঘন
নগ্নচুলের বৃষ্টি ফোঁটা।
৪.
ফুল ছিঁড়ে নিয়ে গেছে কেউ,
এবার আমি বোঁটা ছিঁড়ব
(হাতে না পারলে দাঁতে)
‘পাগল’ শব্দটা মুখ দিয়ে বের করে
কোথায় পাঠিয়ে দাও?
৫.
যে অংশটা উন্মুক্ত রাখো, রাখতেই চাও
সে অংশকে আহ্বান বলে-
আমি আসছি,
আমার দিকে মুখ করে দাঁড়াও-
হাঁটা বসা এবং শোয়ার প্রসঙ্গে
পর্যায়ক্রমে যাওয়া যাবে।
0 মন্তব্যসমূহ