বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ

“বনলতা সেন” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা কবিতা। কবি বুদ্ধদেব বসু তার কবিতা পত্রিকায় “বনলতা সেন” কবিতাটি ১৯৩৫ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৪২ সালে প্রকাশিত তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ "বনলতা সেন" এ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত করেন। বাংলা সাহিত্যে 'শুদ্ধতম কবি' খ্যাত জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতাটি মুলত রোম্যান্টিক ঘরনার কবিতা।

Bonolota Sen - Jibanananda Das



বনলতা সেন
- জীবনানন্দ দাশ


হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

 চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
 মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
 হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
 সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
 তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
 পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে চাওয়া নাটোরের বনলতা সেন।

 সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
 সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
 পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
 তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
 সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
 থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ